তড়িৎ লেপনের সংজ্ঞা, উদাহরণ, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার

তড়িৎ লেপনের সংজ্ঞা, উদাহরণ, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার

তড়িৎ লেপনের সংজ্ঞা, উদাহরণ, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার

প্রিয় পাঠক আজকের এই পর্বটির মধ্যে তড়িৎলেপন সম্পর্কে আলোচনা করলাম যার মধ্যে রয়েছে তড়িৎ লেপনের সংজ্ঞা, উদাহরণ, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার

তড়িৎলেপন কাকে বলে ?

জলবায়ু ও বাতাসের অক্সিজেনের প্রকোপ থেকে রক্ষার করা জন্য তড়িৎ – বিশ্লেষণের সাহায্যে লোহা , তামা , পিতল প্রভৃতি ধাতু বা ধাতুসংকরের তৈরী বস্তুর ওপর সোনা , রূপো , দস্তা , নিকেল , ক্রোমিয়াম , টিন প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ও ক্ষয়রোধকারী ধাতুর পাতলা প্রলেপ দেওয়াকে তড়িৎলেপন বলে ।

তড়িৎ লেপনের উদাহরণ

মনে কর , লোহার চামচের উপর তামার প্রলেপ দিতে হবে । তাহলে—
( a ) কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে কয়েকফোটা সালফিউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে দ্রবণটিকে তড়িৎ – বিশ্লেষ্য হিসাবে ভোল্টামিটারে নিতে হবে ।
( b ) বিশুদ্ধ কপারের পুরু পাতকে অ্যানোড এবং লোহার চামচগুলিকে ক্যাথোড হিসেবে নিয়ে = তড়িৎদ্বার দুটি থেকে ঐ বস্তুগুলিকে তড়িৎ – বিশ্লেষ্যের মধ্যে নিমজ্জিত অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে । এই অবস্থায় ব্যাটারির সাহায্যে তড়িৎ – বিশ্লেষ্যের মধ্যে তড়িৎ – প্রবাহ পাঠালে লোহার চামচের উপর তামার পাতলা প্রলেপ পড়বে এবং অ্যানোড ক্রমশ ক্ষয় হবে ।
( c ) কিছুক্ষণ পরে তড়িৎ – প্রবাহ বন্ধ করে লোহার চামচগুলিকে ভোল্টামিটার থেকে বের করে নিয়ে শুকনো করতে হবে । পরে ঐ চামচগুলিকে যন্ত্রের সাহায্যে পালিশ করলে তামার প্রলেপযুক্ত উজ্জ্বল ও চকচকে চামচ পাওয়া যাবে ।

তড়িৎ লেপনের উদ্দেশ্য গুলি কি কি

তড়িৎ লেপনের উদ্দেশ্য :
( 1 ) জলবায়ু এবং অক্সিজেনের বিক্রিয়া থেকে লোহা , তামা , পিতল প্রভৃতি ধাতু বা ধাতু সংকরের তৈরী জিনিসকে রক্ষা করা ,
( 2 ) ধাতব পদার্থের স্থায়িত্ব ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ,
( 3 ) ধাতু ও ধাতুসংকরের তৈরী বস্তুকে চক্‌চকে ও আকর্ষণীয় করে তোলা ।
যেমন :
[ ক ] লোহার জিনিসকে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে রাখলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে লোহায় মরচে ধরে যায় । এতে লোহার জিনিসটিকে দেখতে যেমন খারাপ লাগে , তেমনি মরচে ধরার ফলে জিনিসটি ক্ষয় পেয়ে নষ্ট হয় । এই জন্য লোহার জিনিসের ওপর তড়িৎ – লেপন পদ্ধতিতে নিকেল , ক্রোমিয়াম , জিংক , টিন প্রভৃতি ক্ষয়রোধকারী ধাতুর পাতলা প্রলেপ দেওয়া হয় ।
[ খ ] পিতল বা ব্রোঞ্জের গহনার ওপর সোনার পাতলা প্রলেপ দিয়ে গহনাটির সৌন্দর্য ও আকর্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো হয় ।

তড়িৎ লেপনের ব্যবহার

তড়িৎ – লেপনের সময় :
( 1 ) ধাতুর যে জিনিসের ওপর তড়িৎ লেপন করতে হবে তাকে প্রথমে লঘু অ্যাসিড বা ক্ষারের শাহায্যে পরিষ্কার করে পরে জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয় ।
( 2 ) যে জিনিসের ওপর তড়িৎ লেপন করতে হবে , তাকে ভোল্টামিটারে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহার করতে হয় ।
( 3 ) যে ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হবে , সেই বিশুদ্ধ ধাতুর দণ্ড বা পাতকে ভোল্টামিটারে অ্যানোড ( + ) হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
( 4 ) এই সময় ভোল্টামিটারে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসেবে , যে পদার্থের প্রলেপ দেওয়া হবে সেই পদার্থের জলে দ্রাব্য লবণের দ্রবণ ব্যবহার করা হয় ।
( 5 ) এই বার তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হলে অ্যানোডের ধাতু ক্রমশ ক্ষয় পেতে থাকে এবং ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহার করা বস্তুর ওপর ঐ ধাতুর প্রলেপ পড়তে থাকে ।
( 6 ) তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণে যত বেশী সময় ধরে তড়িৎ প্রবাহিত করা হতে থাকে , প্রলেপ ততই মোটা হয় ।
( 7 ) উপযুক্ত পরিমাণে প্রলেপ পড়ার পর জিনিসটিকে ভোল্টামিটার থেকে বাইরে এনে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে শুষ্ক করা হয় । পরে ওটিকে পালিশ করে মসৃণ ও ঝকঝকে করা হয় ।

বিভিন্ন ধাতুর ইলেকট্রোপ্লেটিং বা প্রলেপ

[ 1 ] সোনার প্রলেপ : ব্রোঞ্জ , তামা , পিতল প্রভৃতি ধাতুর তৈরী গহনা বা পাত্রের ওপরু সোনার প্রলেপ দিতে হলে :
( 1 ) বিশুদ্ধ সোনার পাত অ্যানোড ( + ) হিসাবে ,
( 2 ) ব্রোঞ্জ বা অ ধাতুর গহনা বা পাত্রকে ক্যাথোড ( – ) হিসাবে এবং
( 3 ) পটাসিয়াম – অরোসায়ানাই K [ Au (CN)2 ] – এর জলীয় দ্রবণকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসাবে ব্যবহার করতে হয় ।
[ 2 ] রূপোর প্রলেপ : টিন তামা অথবা লোহার কোন জিনিসের ওপর রূপোর প্রলেপ দিয়ে হলে :
( 1 ) বিশুদ্ধ রূপোর পাতকে অ্যানো
( 2 ) তামা বা অন্য ধ ( + ) হিসেবে , জিনিসটিকে ক্যাথোড ( – ) হিসাবে এবং
( 3 ) পটাসিয়াম আর্জান্টো সায়ানাই K [ Ag ( CN ) 2 ] – এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ – বিশ্লেষ হিসাবে ব্যবহার করতে হয় ।
[ 3 ] তামার প্রলেপ : লোহার কোন জিনিসের ওপর তামার প্রলেপ দেওয়ার সময়
( 1 ) বিশুদ্ধ তামার পাতকে অ্যানোড ( + ) হিসেবে ,
( 2 ) লোহার জিনিসটিকে ক্যাথে ( – ) হিসেবে এবং
( 3 ) কপার সালফোটা ( CuSO4 ) জলীয় দ্রবণকে তড়িৎ – বিশ্লেষ হিসেবে ব্যবহার করতে হয় ।
[ 4 ] নিকেলের প্রলেপ : লোহা বা অন্য কোন ধাতুর তৈরী জিনিসের ওপর নিকেলের প্রলেপ দেওয়ার সময় :
( 1 ) বিশুদ্ধ নিকেলের পাতকে অ্যানোড ( + ) হিসাবে ,
( 2 ) লোহা বা অন্য ধাতুর জিনিসটিকে ক্যাথোড ( — ) হিসেবে এবং
( 3 ) নিকেল সালফেট ( NiSO4 ) – সঙ্গে সামান্য বোরিক অ্যাসিড মিশিয়ে সেই দ্রবণকে তড়িৎ – বিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
[ 5 ] টিনের প্রলেপ : লোহা বা অন্য ধাতুর পাত্রে টিনের প্রলেপ দিতে হলে :
( 1 ) বিশু টিনের পাতকে অ্যানোড ( + ) হিসেবে ,
( 2 ) পাত্রটিকে ক্যাথোড ( – ) হিসেবে এবং
( 3 ) স্ট্যানাস ক্লোরাইডের ( SnCl2 ) জলীয় দ্রবণকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
[ 6 ] ক্রোমিয়ামের প্রলেপ : লোহা বা অন্য ধাতুর জিনিসের ওপর ক্রোমিয়ামের প্রলেপ দিতে হলে :
( 1 ) বিশুদ্ধ ক্রোমিয়ামের পাতকে অ্যানোড ( + ) হিসেবে ,
( 2 ) লোহা বা অন্য ধাতুর জিনিসটিকে ক্যাথোড ( – ) হিসেবে এবং
( 3 ) ক্রোমিয়াম সালফেট Cr2 ( SO4 )3 ও ক্রোমিয় অ্যাসিডের দ্রবণকে তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
[ 7 ] জিঙ্কের প্রলেপ : লোহা বা অন্য ধাতুর ওপর দস্তা বা জিঙ্কের প্রলেপ দিতে হলে ।
( 1 ) বিশুদ্ধ জিঙ্কের পাতকে অ্যানোড ( + ) হিসেবে ;
( 2 ) অন্য ধাতুটিকে ক্যাথোড (—) হিসেবে এবং
( 3 ) জিঙ্ক ক্লোরাইডের ( ZnCl2 ) জলীয় দ্রবণকে তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহা করা হয়ে থাকে ।

সরকারী চাকরির পরীক্ষার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল

ভারতের তফসিলি উপজাতিদের তালিকা
2011 আদমশুমারি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ
List of Government Scheme In Bengali
ভারতের 2011 সালের জনগণনা
RRB Group D Science Question in Bengali
ভারতের প্রথম মহিলা তালিকা
ভারতের প্রথম পুরুষ তালিকা

1 thought on “তড়িৎ লেপনের সংজ্ঞা, উদাহরণ, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top